55

Search This Blog

Saturday 2 April 2016

একটি গা শিউরে উঠা ভয়ংকর রাত্রির ঘটনা হয়ত আপনার হৃদ যন্ত্র কেঁপে উঠবে

সবাইকে ‍শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করলাম এডভেঞ্চার বা হরর, গা ছমছম করে উঠা ভয়ংকর রাত্রির সেই ঘটনাটি যা কোন কাল্পনিক নয়। যেটা আমার সাথে ঘটে যাওয়া কল্পনাকে হার মানানো একটি অধ্যায়। টেকি কর্তৃপক্ষের নিকট ক্ষমা চেয়ে নিচ্চি সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক একটি কনটেন্ট নিয়ে আলোচনা করছি বিধায়। মূলত গত কয়েকদিন যাবৎ মাথায়
শুধু গিজ গিজ করছিল কাহিনিটি কারো সাথে শেয়ার করতে পারছিনা তাই। আমার এমন কোন ব্লগিং প্লাটফর্মও ছিলনা যেখানে বিষয়টি শেয়ার করতে পরি তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই টেকটিউনসকে বেছে নিলাম। টেকি কর্তৃপক্ষ আশা করি বিষয়টি স্বদয় দৃষ্টিতেই দেখবেন।
২৮/০৩/২০১৬ সোমবার, কাজিন মামুনের বিয়ের এঙ্গেজমেন্ট অনুষ্ঠান শেষে মামুন সহই ট্রেনে রওয়ানা দিলাম যার যার গন্তব্যে। মামুন যাবে ঢাকায় আর আমি যাবো কুমিল্লায়, দুজনরই পথ একটা তাই একই টেনে উঠলাম।  আমি কুমিল্লা স্টেশানে নেমে যাই আর মামুন চলে যায় কুমিল্লা থেকে বাসযোগে ঢাকায়। কুমিল্লা এসেই শুনি ভাইয়া আজকে থাকবেনা বাসায়, শশুর বাড়ীতে বেড়াতে যাবে। এর আগেই আম্মুসহ ফ্যামিলির বাকি সদস্যরা চট্রগ্রামে চলে যায় অন্য আরেকজন কাজিনের বিয়েতে এটেন্ড করতে। তাই পুরো থালি বাসায় আমাকে একাই থাকতে হবে। তাতে কোন সমস্যা নেই আমি ইতপূর্বে আরও অনেকবারই বাসায় একা ছিলাম যেটা আমার জন্য কোন ব্যপারই ছিলনা।
রাত দশটা! টাউন হল ময়দানে বন্ধুরা সবাই আড্ডা শেষে বাসার পথ ধরলাম। একা হাঁটছি আমি, বৃষ্টি ভেজা রাত, শুনশান নিরবতা প্রায় বাসার গেইটের কাছে এসেই পৌছে গেলাম। হঠাৎ পেছন থেকে শুনতে পেলাম ‘ভাইয়া’ ঘাড় মুড়িয়ে দেখে বুঝলাম কেউ একজন আমাকেই লক্ষ করে ডাকছে, গলার স্বরটাও চেনা মনে হচ্ছিল। একটু এগেয়ে আসতেই দেখি মামুন, আচমকা আবাক হয়ে গেলাম, মামুন কোত্থেকে আসবে এখন। মামুন সম্পর্কে কিছু কথা বলি, মামুন হলো একজন ইন্টরিয়র আর্কিটেক্ট ডিজাইনার, ঢাকার গুলশানে অবস্থিত নাভানা গ্রুপে ভাল মাইনেতে জব করে। আমার লাইফে সবচাইতে বেশী ইম্পর্টেন্ট কোন ব্যক্তি থাকলে সেটা হলো মামুন। কিছু কিছু সময় মনে হয় মামুন নিজের লাইফ থেকেও আমাকে নিয়েই বেশী চিন্তিত থাকে, সবসময় আমার উৎকর্ষতাই কামনা করে। আমিও আমার লাইফে সব সময় তিনজন মানুষের সফলতা কামনা করি তার মধ্যে মামুন সর্বাগ্রেই স্থান পেয়ে থাকে। সাধেতো কিছু কিছু নিন্দুক আমাদেরকে বৌ-জামাই বলে আখ্যায়িত করেনা, যাক ওটা অন্য কথা। এবার মূল কথায় আশা যাক।
কিরে তুই এত রাত, এখন কোত্থেকে আসলি, তুই না ঢাকা চলে গেছিস? না ভাইয়া! বাস ক্যান্টেনমেন্ট পৌছার পর প্রচন্ড জ্যমে আটকা পড়ে, তাই বাস থেকে নেমে ওখানকার একটা ফ্রেন্ডের সাথে আড্ডা দিয়ে তোর কাছে চলে এলাম এখন। ঠিক আছে কোন সমস্যা নেই, চলে এসেছিস ভালই হয়েছে। আমিও বাসায় একা দুজন একসাথে গল্প করা যাবে।
এক সাথে বাসায় ঢুকলাম, ঢুকেই অদ্ভুদ একটা গন্ধ অনুভব করলাম যা ইতপূর্বে কখনও অনুভব করিনি। গন্ধটা দূর্গন্ধ ছিল নাকি সূগন্ধ ছিল তা ঠিক আঁচ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিলাম মনে হয়।
একসাথে বসে ডিনার শেষ করলাম (মামুন করেনি, ও নাকি ফ্রেন্ডের সাথে ডিনার সেরে ফেলেছে)। ডিনার শেষ তাই দুজনই শুয়ে পড়লাম। গল্প-টল্প কিছুই হয়নি। শোয়ার সাথে সাথেই যেন রাজ্যের সব ঘুম আমাকে আকড়িয়ে ধরে তাই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম। এর মধ্যে কি হয়েছে কিছুই জানিনা।
সম্ভবত মধ্যরাত! হঠাৎ ঘাড়ে পশমাবৃত একটি তুলতুলে হাতের স্পর্ষ অনুভব করি। মনের ভ্রম মনে করে আবার ঘুমিয়ে পড়ি, কিছুক্ষণ পর আবারও সেই হাতটির স্পর্ষ অনুভব করি। এবার আর ঘুমিয়ে না থেকে উঠে বসে পড়লাম, অজানা একটা ভয় কাজ করতে লাগলো তাই খাট থেকে নেমে পুরো বাসায় পায়চারি শুরু করি বিষয়টি কি বুঝার জন্য। বাসার সব রুমের দরজাই যেভাবে শোয়ার সময় লক করেছিলাম সেভাবেই রয়েছে, হঠাৎ চোখ পড়লো সদর দরজার দিকে। একি দেখলাম! এত রাত দরজা খোলা থাকবে কেন, শোয়ার সময়তো নিজ হাতেই দরজা বন্ধ করেছিলাম। সবকিছু অস্বাভাবিক লাগছে। ভয়ে নিজের শোয়ার রুমে চলে এলাম আবার কিন্তু খাটে মামুনকে দেখতে পেলামনা অথচ দুজনই এক সাথে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ভয় প্রচন্ডভাবে চেপে ধরলো, কি হতে যাচ্ছে এইসব।
কিছু বুঝে উঠার আগেই হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো, তাকিয়ে দেখি কলার মামুন। সাথে সাথে রিসিভ করে জিজ্ঞেস করলাম কিরে তুই কোথায়? ওপাশ থেকে মামুন বলল খুব গরম লাগছিল তাই ছাদে চলে আসছি। তুইও ছাদে চলে আয়, একসাথে বসে গায়ে কিছুক্ষণ শীতল হাওয়া মেখে নেই। ঠিক তখনি কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে ডুবে যাই। সাথে সাথে তার কথায় সায় দিয়ে বললাম হ্যাঁ তুই থাক আমি আসছি। সম্ভবত আমি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি, কেউ যেন আমাকে হেপ্টনাইজড করে ফেলল নইলে কেন আমি কিছু না বুঝে, কিছু বিবেচনা না করেই এত রাতে তার কথায় ছাদে রওয়ানা হলাম।
নির্মানাধীন আট তালা বাসা  যেখানে আমরা থাকি তিন তালায়। পাঁচ তালা সিড়ি বেয়ে আট তালা ছাদে উঠে পৌছুলাম। উঠার পূর্ব  মূহুর্তেহও মনে হচ্ছিল চতুর্দিক জোৎস্নায় ভরপুর কিন্তু না উঠে দেখি জোৎস্নার লেশ-মাত্র কিছুই নেই, চতুর্দিক ঘুটঘুটে অন্ধকার। ভয়ে হাত-পা কাঁপছিল, মামুনকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। হঠাৎ কানে শব্দ আসলো ভাইয়া আমি উপরে বসে আছি, উপরে চলে আয়। উপর বলতে বাসার পানির ট্যাংকের ছাদকে বুঝানো হয়েছে যা নবম তালার সমপর্যায়ে পড়ে। নড়বড়ে বাঁশের তৈরী একটি মঈ বেয়ে উপরে উঠি। ট্যাংকের উপর মামুন কেন কাউকেই দেখতে পাচ্ছিনা, গভীর রাত নয় তালার উপর একা দাড়িয়ে আছি যেখানে ছাদে কোন ধরনের রিলিংই ছিলনা। মাথা ঝিম ঝিম করছে, ঘোর অমানিশায় হারিয়ে যাচ্ছি, ভয়ে চিৎকার দিলাম কিন্তু আমার এই চিৎকার কেউ শুনেনি, শুনার কথাও না। কারণ বুঝতে পারলাম চিৎকারটি ছিল মনের ভিতর যেটার কোন বাস্তব অস্তিত্ব ছিলনা। বাকরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছিলাম।
বাঁশের মঈ বেয়ে আবার নিচে নামতে লাগলাম। যখন মঈটির মধ্যখানে এসে পৌছাই হঠাৎ পশমাবৃত সেই হাতটি আবারও আমার ঘাড় স্পর্শ করে গেল। এক ঝটকায় বাশের মঈ থেকে আট তালার ছাদে নেমে এলাম। এখন আর কিছুই বুঝতে বাকী রইলনা কিছু একটা হতে যাচ্ছে আমার সাথে। হাত-পা অবশ হয়ে যাচ্ছে ভয়ে, কিছুক্ষণের জন্য আনমনা হয়ে গেছি। পিছন থেকে কিশের যেন একটি শব্দে সম্বিত ফিরে পাই। ভাবলাম মামুনকে একটা ফোন দেওয়া যাক। পকেট থেকে ফোনটা বের করি দেখি সুইচ অফ দেখাচ্ছে, যদিও ফোন অনই ছিল।
মোবাইল অন করে মামুনকে ফোন দিলাম। ফোন বেজেই যাচ্ছে বেজেই যাচ্ছে। তৃতীয় কলের পর রিসিভ হলো। ঘুম জড়ানো কন্ঠে মামুন বলল কিরে কি হইছে ভাইয়া, এত রাতে ফোন দিলি যে, বাসায় কিছু হইছে? মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো যেন, কি ব্যাপার মামুন এইভাবে কথা বলে কেন! জিজ্ঞেস করলাম এত রাত মানে কয়টা বাজে? তুই কই এখন? মামুন বলল কেন আমিতো ঢাকাতেই, আর ঘড়িতে এখন বাজতেছে রাত ৩টা ৫০। মুহুর্তেই ফোনটি আমার হাত ফসকে পড়ে গেলো। পুরো শরীর আড়ষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে, আতংকিত মনে পেছনে ফিরে তাকাইনি আর সোজা সিড়ি বেয়ে দৌড় দিলাম নিচের দিকে।
আট, সাত, ছয় তালা পেরিয়ে যখন ৫ম তালায় এসে পৌছাই তখন দেখি তিনটি লোক আমার পথ আগলে দাড়িয়ে আছে। তিন জনই পৃথক পৃথক রংয়ের জামা পরে আছে, কালো, সাদা, নীল। কালো জামা পরিহিত লোকটিকে দেখাই যাচ্ছিলনা, তার চোখ দুটি আগুনের ফুলকির মত জল জল করছিল। তিনজনই তাদের কাছে ডাকছে আমাকে অবশ্য সাদা জামা পরিহিত লোকটি বাম হাত দিয়ে না সূচক ইশারা করছিল। বুঝতেছিলাম না, সম্ভবত কাছে না ঘেষতে নিষেধ করছিল। ঘাম ঝরতে লাগলো পুরো শরীর জুড়ে, গায়ের পশমগুলো যেন কাটার মত পুরো শরীরে বিধে যাচ্ছে। অনেকটা অবচেতন হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ভয়ে উপরে তাকাতে পারছিলাম না। সামান্য পরে আলত করে উপরের দিকে একটু তাকালাম দেখি এখন আর কেউ নেই।
জড়সড় শরীর নিয়ে আবার নিচে নামতে শুরু করি, হঠাৎ দেখি আবার কালো জামা পরিহিত লোকটি আমাকে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ভয়ে থমকে দাড়িয়ে গেলাম। লোকটি ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো, দেখি স্ব-শরীরে মামুন আমার সামনে দাড়ানো। মূহুর্তের জন্য সব ভয় কেটে গেল যেন, আমি একে সাত্যি সত্যি মামুন ভাবতে লাগলাম।
মামুন ভেবে নির্ভয়ে এগিয়ে গেলাম  লোকটির কাছে। ঠিক তখনি সেই অদ্ভুদ গন্ধটি আবার নাকে আসতে লাগলো যে গন্ধটি বাসায় প্রবেশের সময় পেয়েছিলাম। এখন আর গন্ধটি বুঝতে সমস্যা হচ্ছে না, মানুষের মাংশ পঁচা উৎকট একটি গন্ধ। দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম প্রায়। যতই এগুচ্ছিলাম দেখি ততই লোকটির চেহারা ক্রমশ পরিবর্তন হচ্ছিল। পা আর সামনে বাড়াতে পারছিলাম না। ঘোর ভেঙ্গে গেলো মামুন কেন আসবে এখানে! সম্ভবত জ্ঞান হারিয়ে ফেলতেছি। লোকটির চেহারার পরিবর্তন হতেই চলল। এক সময় দেখি লোকটির চেহারার বম পাশ সহ শরীরের প্রায় ২ চতুর্থাংশই পঁচে মাংশ ঝরে ঝরে পড়তেছে। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। জ্ঞান হারিয়ে সিড়িতেই পড়ে গেলাম। এরপর কি হয়েছে আর কিছুই মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন ঘড়িতে সকাল ৮টা ৩০ বাজে। তাকিয়ে দেখি ৫জন লোক আমাকে ঘিরে তাকিয়ে আছে, চিনতে সমস্যা হয়নি লোকগুলো বাসা নির্মানরত শ্রমীক। লোকগুলো জানতে চইল কি হয়েছে, আমি এখানে কেন? লোকগুলোর কোন প্রশ্নের উত্তর দিতেই আমার ইচ্ছে করছিলনা। সেই ঘটনাটির কথা আমি মনে করতেও চাচ্ছিলামনা আর তাই সোজা বাসায় চলে এলাম, দেখি দরজা আগের মতই খোলা রয়েছে। অত:পর গোসল সেরে আবার নির্ভয়হীন গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...
Flying Twitter Bird Widget By bdtechzone.com